সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিষাক্ত মাছ
|
![]() লেখক: আসিফ শাহরিয়ার
শিক্ষার্থী,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভয় পাচ্ছিলাম ঐ জায়গার মানুষগুলোকে কিন্তু আক্রমণ করলো তাদের পোষ্য কুকুরগুলো! ভোর ৫টা ৪০ মিনিট! কাউকে নেয়ার ইচ্ছে ছিল না, যেহেতু আমরা একটা গ্রুপ গিয়েছিলাম তাই সৌজন্যতাবোধ থেকে কয়েকজনকে বলেছিলাম এই সময়ে বের হব এবং নির্দিষ্ট সময়ে ওরা বের হতে পারলে এক সাথে যাবো। ঠিক ঐ সময়ে ৪ জন বের হই এবং “সমুদ্র বিলাসে” যাবো বলে কিছু সময় ওদের থেকে আলাদা থাকবো সেটিও বলেছিলাম। অতঃপর সমুদ্র পাড়ে গিয়ে ওরা ৩ জন গেল একদিকে আর আমি অপরদিকে সমুদ্র বিলাসের উদ্দেশ্য। সারারাত মাছ ধরার পর সাম্পানগুলো পাড়ে এসে ভীড়েছে! কোনো মানুষের আনাগোনা নেই, আমি পাড় ঘেষে হাঁটতেছিলাম আর মাঝে মাঝে ভয় পাচ্ছিলাম ছিনতাইকারীর। আবার ফোনেও চার্জ ছিল মাত্র ১৫% আর সেটিও ক্রমাগত কমতে ছিল। হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটা সামুদ্রিক মাছ পড়ে আছে, মনে হচ্ছে ঢেউয়ের সাথে এসেছিল আর ফিরে যেতে পারে নি। সেটি দেখে তো ভীষণ খুশি, সবাইকে একটা চমক দেখানো যাবে। পরে মুহূর্তেই কিছু ছবি তুলে নিলাম। পরক্ষণেই দু’একজন মানুষের আনাগোনা দেখলাম। ভেবেছিলাম তাঁরা মাছ টা নিয়ে নিবে কিন্তু কিছু বলেনি। এগিয়ে যাচ্ছিলাম সামনের দিকে, তখন কেউ ছিল না। হঠাৎ করে একটা কুকুরের নজরে আসে মাছটা! কুকুর দেখে আমি তেমন ভয় পাই না কিন্তু মাছটার জন্য কুকুর পিছু নেয়! কয়েকবার তাড়িয়ে দেয়ার পর আরো দুটো কুকুর একত্রে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। পরক্ষণে আমি সমুদ্র বিলাসের সামনে চলে আসি এবং মাছ রেখে দাঁড়ায় একটা লাঠি হাতে নিয়ে। আমি মূলত আসাদ ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম এখানে, তবে এর মধ্যে কয়েকবার কল দিয়ে ফেলেছি ভাইয়াকে! উনার ফ্রেস হয়ে বের হতে হতে কিছুটা সময় লাগবে এটা বলল! কিন্তু কুকুরগুলো বসে রইল আর কিছুক্ষণ পর পর তিনটি কুকুর একসাথে আক্রমণ করতেছিল। এর মধ্যেই দুইবার স্থানীয় মাছ বিক্রেতা কুকুরগুলো তাড়িয়ে দিয়েছিল। এক পর্যায়ে খুবই ভয়ঙ্কর আচরণ করতে লাগল কুকুরগুলো! আসাদ ভাইয়াকে বিষয়টি জানিয়ে বললাম মাছটা লাগবেই, আমি চলে যাই বন্ধুদের ফোন দিয়ে। ফোনে মাত্র ১% চার্জ ছিল! শুধু একটা ফোনকল করে লোকেশন বলা মাত্রই মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আরেকজন মুরুব্বি এসে রাস্তা দেখিয়ে বলল এদিকে দিয়ে চলে যেতে পারবে। পরে এক দৌড় দিয়ে সমুদ্র বিলাসের পাশে একটা গাছের আড়ালে চলে যায়, সেখানে দেখি একটা কাগজের বেড়া দেয়া একটা ঘর আর সেখানে খুবই ছোট ছোট দুটি বাচ্চা বসে আছে! পাশে একটা চেয়ারও ছিল। অনুমতি নিয়ে বসলাম আর বললাম কুকুরের আক্রমণের কথা। একজন বলল, মাছ না দিলে কুকুর কামড়ে মাছ নিয়ে যাবে! একবার ভাবলাম মাছ কুকুর কে দিয়ে দেই আর আসাদ ভাইয়ার সাথে দেখা করে যাই, পরে আবার ভাবলাম সবাইকে চমক দেখানো টা হবে না। খুবই ভয়ঙ্কর সময় চলছিল, কুকুরগুলো খুঁজতেছিল ঐ জায়গা জুড়ে। কিছুক্ষণ পরে ওরা ৩জন চলে আসল। পরে ওরাও মাছ টা দেখে অবাক, তখনও কুকুরগুলো ছিল। আমরা অন্য আরেকটা রাস্তা বের করে হোটেলের দিকে রওনা হই। মোটামুটি ভালো প্ল্যান হয়ে গেছিল হোটেল পর্যন্ত যেতে যেতে। হোটেলে ফিরে সবাইকে ঘুম থেকে ডাকা হয়, এর মধ্যে আমাদের একজন শিক্ষক ছিল, উনিও রীতিমতো অবাক! সামুদ্রিক মাছ বলে কথা! পরে হোটেলের লোকজন দেখে বলল, এই মাছটা খাওয়া যায় না, এটি একটি বিষাক্ত মাছ!!! পরে রইলো একপাশে, কিছুক্ষণ পরে শুরু হল শ্বাসরোধ করা দুর্গন্ধ! হোটেলের লোকগুলো নিজেদের মধ্যে রীতিমতো ঝগড়া লেগে যাচ্ছিল এই দুর্গন্ধ মাছ টা নিয়ে! এখন কেউ ধরতেও আগ্রহী না এই দুর্গন্ধ মাছ টা! অথচ এই মাছ ধরে ছবি তুলেছি বিভিন্নভাবে। একজন বলল, ভাই মাছ টা তো নিয়ে আসছেন! আমি বললাম, ভাই আপনারা কিছু একটা করেন, এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেল আর ঝামেলা দিয়েন না! তারপরে গ্রুপের একেকজনের কাছে একেক ধরনের কথা শুনলাম! ভেবেছিলাম বাহবা পাবো, হোটেলের লোকগুলোও বলছিল, বারবি কিউ করলে টেস্ট করে দেখতে পারতেন! মাছ টা বিষাক্ত ছিল বলে, সবাই নামের আগে “বিষাক্ত” যুক্ত করে দিল!
|