শিশুশ্রম বনাম আগামী দিনের ভবিষ্যৎ
|
![]() আসমা আফরোজ
বাংলাদেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অনেকে হয়ত বলবেন, শিশুশ্রম থাকা উচিত৷ কেননা এ সব শিশু টিকে আছে পরিশ্রম করে৷ কাজ না করলে তাদের খাওয়াবে কে? দেখবে কে? তাছাড়া তাদের পরিবারও টিকে আছে তাদের আয়ের উপর৷ মোটের উপর গৃহকর্মী হিসেবে এসব শিশু কাজ করলে সেটা অনেক পরিবারের জন্যও ভালো৷ আমার কাছে এ সব যুক্তি শিশুশ্রমের যৌক্তিক কারণ মনে হয় না৷ একটা শিশুকে কাজের মধ্যে ঠেলে দিয়ে একটা সুন্দর সম্ভাবনাকে কার্যত শুরুতেই মাটি চাপা দেয়া হয়৷ আর এর দায় আমাদের সবার, এবং অবশ্যই জনগণের প্রতিনিধি সরকারের৷ শিশুশ্রম শিশুর যে ক্ষতি করে প্রশ্ন উঠতে পারে, শিশুশ্রম কেন ক্ষতিকর? কাজ করবে এর মধ্যে আবার ক্ষতির কী আছে? ক্ষতিটা মানসিক এবং শারীরিক৷ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুরা মূলত কাজ করে এমন সব প্রতিষ্ঠানে যেগুলোর আনুষ্ঠানিক তেমন কোনো ভিত্তি নেই৷ এ সব প্রতিষ্ঠানে কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, নিয়মকানুন মানার বিধিনিষেধ নেই, কোনটা শিশুর জন্য ক্ষতিকর তা বিবেচনার ব্যবস্থা নেই৷ এমন পরিবেশে কাজ করে শিশুরা অল্প বয়সেই বিভিন্ন রোগের কবলে পড়ে যায়৷ পরিশ্রমের ক্লান্তির কারণে, পর্যাপ্ত সময় না থাকায় লেখাপড়া থেকে কার্যত ছিটকে পড়ে৷ শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে শিশুরা প্রতিনিয়তই নিগ্রহেরও শিকার হচ্ছে৷ গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার দেখেছি৷ বাংলাদেশে কিছু মানুষ সম্ভবত শিশুদের নির্যাতন করে। আমরা শিশু নির্যাতন দেখেছি বলে আঁতকে উঠি। অনেক গৃহকর্মী প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়ে বেড়ে উঠছে, যাদের দেখার কেউ নেই৷ শিশুশ্রম বন্ধ না হলে এমন নির্যাতন বন্ধ হবে না বলেই আমার ধারণা শিশুদেরকে শিশুশ্রমে নিয়োগ করে কার্যত তাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে৷ কেননা অল্প বয়সে কাজ করতে গিয়ে তারা লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছে, মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ আর শিশুদের বৃদ্ধির যে স্বাভাবিক পন্থা, সেই পন্থা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে৷ তারা এমন সব কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে যেগুলো তাদের বয়সে করার কথা স্বাভাবিক অবস্থায় ভাবাই যায় না৷ শিশুশ্রম বন্ধে তাহলে করণীয় কি? সমস্যার সমাধান না দিয়ে লেখা শেষ করা উচিত নয়৷ বাংলাদেশের আইনেই আছে ১৪ বছরের কম বয়সিদের কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না৷ আমি মনে করি, এই আইনের প্রয়োগ করতে হবে কঠোরভাবে৷ এখানে সরকারের দায়িত্ব অনেক৷ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে শিশুশ্রম বন্ধ করে সেসব শিশুকে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া, তাদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে । মনে রাখতে হবে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত
|