মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান |
বরিশাল প্রেস |
দেশ গঠনে সকলকে দেশপ্রেমিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য তাঁর সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক ও নির্ভীক হিসেবে গড়ে তুলবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের আগে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১১ স্কোয়াড্রন এবং ২১ স্কোয়াড্রনকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরের বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বায়নের এ যুগে যেকোন দেশের জন্য একটি পেশাদার বিমান বাহিনী অপরিহার্য। তিনি একটি আধুনিক ও চৌকষ বিমান বাহিনী গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন এজন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। সেখান থেকে বিশ^ দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেন আরো দৃঢ় হয় সেজন্য তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক মেয়াদের সরকার পরিচালনায় আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের অর্থনীতির গতিকে স্থবির করে দিলেও তাঁর সরকার সীমিত সামর্থ্য নিয়েই এই অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে সরকার মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করতে পারলেও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন শহরের সব সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা, সুপেয় পানি এবং স্যানিটেশনসহ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি-এই সব কিছু নিয়েই আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার সুফল বাংলাদেশ অবশ্যই পাবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের মানুষের জন্য এটাই আমাদের উপহার থাকবে, প্রতিটি গৃহহারা মানুষ ঘর পাবে, প্রতি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ¦লবে এবং সকলে উন্নত জীবন পাবে, বলেন তিনি। এ সময় তিনি করোনার টিকা প্রহণ করা হলেও মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত বিষয়গুলো মেনে চলতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিমান বাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদানের লক্ষে ইউনিট কমান্ডেরগণের হাতে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। বিমান বাহিনী প্রধান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ ও জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সুদূর প্রসারী কর্মপরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টিকে সামনে রেখেই তাঁর সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাঁর সরকার বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেছে মিগ-২৯সহ বিভিন্ন ধরনের ফাইটার বিমান, সর্বাধুনিক অ্যাভিওনিক্স সমৃদ্ধ পরিবহন বিমান, ইউটিলিটি হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ বিমান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণে উৎকর্ষ আনতে বিমান বাহিনী একাডেমির জন্য এই ঘাঁটিতে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’। মহাকাশ গবেষণা, দেশের বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক বিমানকে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি ‘বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’। তিনি বলেন, এই সকল কার্যক্রম বিমান বাহিনীর সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। আজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশে ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু জাতিসংঘ শাস্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশ ভূমিকা রাখছে সেক্ষেত্রেও বিমান বাহিনীকে উপযুক্ত করে আমরা গড়ে তুলছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাথে এ্যারোনটিক্যাল সেন্টারও নির্মাণ করেছি।’ তিনি বলেন,‘ আমার একটা আকাঙ্খা আছে এই বাংলাদেশেই একদিন আমরা যুদ্ধ বিমান তৈরী করতে পারবো। কাজেই এর ওপর গবেষণা করা এবং আমাদের আকাশসীমা সংরক্ষিত রাখার কাজটা আমরা নিজেরাও যাতে করতে পারি সেইভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ইনশাল্লাহ আমরা এ ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করবো বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ষ্ট্যান্ডার্ড পাওয়া ইউনিট দু’টির সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, পতাকা হল জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব।
তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। ১১ স্কোয়াড্রন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিমান বাহিনীর ক্যাডেটদের মৌলিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের সামরিক বৈমানিকগণকেও এই স্কোয়াড্রন সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ স্কোয়াড্রন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সম্মুখ সারির নিবেদিত আক্রমণাত্মক স্কোয়াড্রন।
সংবাদটি পঠিত :
১০