রাইসুল ইসলাম ফুল রাজিবপুর কুড়িগ্রামঃ
নদীতে সারি সারি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলণ চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। বার বার অভিযোগ করেও বন্ধ হচ্ছে না এসব ড্রেজার মেশিন । এতে চরম হুমকিতে রয়েছে রাজিবপুর উপজেলার সরকারী বেসরকারী স্থাপনাসহ নদী তীরবর্তী শত শত গ্রাম।
সরে জমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা সোনাভরি নদীর টাঙ্গালিয়া পাড়া, মেম্বরপাড়া, মুন্সি পাড়া, করাতি পাড়া, ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনগঞ্জ, চর নেওয়াজী, নয়াচর এবং কোদালকাটি, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদীর বাউল পাড়া, মিয়াপাড়া, বালিয়ামারী, জালচিরা বাঁধসহ সব ক’টি নদীতেই সারি সারি অন্তত ৪৫টি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে নদীর কিনারে। গত কয়েক দিনে আরও যোগ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ ড্রেজার মেশিন ।কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মাত্র ৫০গজ অদূরে রয়েছে সরকারী খাদ্যগুদাম, ২০গজের মধ্যে রয়েছে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে হয়তো আগামী বন্যার আগেই বিলিন হবে এসব স্থাপনা।নদীর কিণার থেকে বালু উত্তোলন করে সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্পের ভূমিহীনদের ঘর তৈরী, নদী শাসনের জন্য ব্লক তৈরি, জিও ব্যাগ ভরাট, স্কুল মাঠ ভরাট, রাস্তা তৈরীর কাজ করছে প্রশাসনের কতার্গণ। এছাড়া প্রশাসনের দোহাই দিয়ে বসত ভিটা তৈরী ছাড়াও ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে এসব বালু। যদিও বালু মহালের অনুমোদন নেই একটিরও। এতে উপজেলার অনেক নদীতে আগাম ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকিতে রয়েছে পুরো রাজিবপুর উপজেলা।তবে প্রশাসনের এমন কর্মকান্ডে হতাশ সচেতন মহলের অনেকেই। প্রশাসনের লোকজন রাজিবপুর উপজেলায় অস্থায়ী। বদলী হলেই অন্যত্র চলে যাবেন। রাজিবপুর বাঁচাবে কে? এমন প্রশ্ন অনেকেরই। তারা মনে করছেন ‘রক্ষকই ভক্ষক’। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে রাজিবপুর উপজেলার নাম।
ড্রেজার মেশিন মালিক শামীম, মিজানুরসহ কয়েক জন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোক এবং প্রশাসনের লোকের নির্দেশেই সরকারী কাজের জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য দফায় দফায় রাজিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি), উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন মহলে মৌখিক অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। তবে রাজিবপুর উপজেলা সমন্বয় সভায় সাংবাদিক সহিজল ইসলাম এবিষয়ে কথা তুললে সাংবাদিককে বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয় এবং রাজিবপুর থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন নির্বাহী কর্মকতা।৩ মাস ধরে কয়েক দফায় রাজিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌসকে জানানো হলে, নানা ছলনায় কালক্ষেপন করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিককে জানান, “আমি ভূমিহীনদের ঘর তৈরীর কাজে ব্যস্ত। আমি ট্রেইনিং এর জন্য ঢাকায় যাব, ঢাকা থেকে এসে ব্যবস্থা নেব।” এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ নবীরুল ইসলাম জানান, “কোথায় কোথায় ড্রেজার চালাচ্ছে তাদের নাম তালিকা এবং রোকেশন দেন। ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
গত ২ জানুয়ারী কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম নদী শাসনের কাজ পরিদর্শনে এসে কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের কিছু মালামাল জব্ধ করে নিয়ে সব ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে চলে গেলে আবারও চালু করা হয় ওই সব ড্রেজার মেশিন। এ ব্যাপারে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, “কোন ড্রেজার মেশিনের অনুমতি আমার দেয়া নেই। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ মেশিন চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সংবাদটি পঠিত :
৭