৮ বছর পরে মায়ের কোলে হারানো ছেলে সুজন পরিবারে আনন্দের বন্যা
|
![]() বরগুনা প্রতিনিধি :- ৮ বছর পরে মায়ের কোলে ফিরেছে হারানো ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন (১৮)। ছেলেকে ফিরে পেয়ে পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার টেপুড়া গ্রামে শুক্রবার রাতে। পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুড়া গ্রামের মুতিন মুন্সির কন্যা বিলকিস বেগমের সাথে ১৯৯৭ সালে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের রুহুল আমিন খন্দকারের বিয়ে হয়। ইতিমধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন ও মেয়ে তামান্না। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামী রুহুল আমিন বিলকিসকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো। কিন্তু ছেলে-মেয়ে বাবা রুহুল আমিন খন্দকারের মন গলাতে পারেনি। বিয়ের সাত বছরের মাথায় বিলকিসের সাথে তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। অসহায় বিলকিস ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন ও মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছেলে সুজনকে একটি হাফিজি মাদরাসায় ভর্তি করে দেন তিনি। পরে তিনি একটি গার্মেন্সের কাজ নেয় বিলবিস। কষ্টে চলে তাদের দিনকাল। ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তুরাগ থানার ভাড়া বাসা থেকে মোবাইলে লোড দিতে গিয়ে পথ হারিয়ে সদর ঘাটে আসে। ওইখানে দেখা হয় পটুয়াখালীর মকবুুল হোসেন মাষ্টারের সাথে। তিনি মাইদুলকে নিয়ে তার মাকে খুজতে থাকেন না পেয়ে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। মাষ্টারের আদর সোহাগে ভুলে যান মা ও পরিবারের কথা। বিলকিস ছেলেকে খুজে তন্নতন্ন করেও কোন হদিস পায়নি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বিলকিস। পরে ওই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকার তুরাগ থানায় তার মা বিলকিস বেগম সাধারণ ডায়েরী করেন। ছেলেকে হারিয়ে মা বিলকিস মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে চলে আসেন। খেয়ে না খেয়ে কোন ভাবে বাবার বাড়ীতে চলে তার জীবন কাল। এদিকে গত চার বছর আগে মকবুল মাষ্টারের ছেলে মেহেদী হাসান সুজনকে পটুয়াখালী জজ কোর্টের সামনে তার প্রিয়জন ফটোস্ট্যাটের দোকানে কাজ দেয়। ওই দোকানে সুজন চার বছর ধরে কাজ করছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তার বেশ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়। ওই বন্ধুদের মধ্যে হাফেজ মোঃ মোস্তফা ও মাসুদের সাথে বেশ ঘনিষ্টতা। তাদের কাছে সুজন সকল কিছু খুলে বলে। ওই দুই বন্ধু মিলে সুজনের পবিরারের সন্ধান করতে থাকে। বন্ধু মোস্তফা তার বড় ভাই ইসলামী আন্দোলনের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরআইএম অহিদুজ্জামানের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। পরে অহিদুজ্জামান আমতলী উপজেলার কাঁঠালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আবু ছালেহ’র সাথে যোগাযোগ করেন। এই দু’জনে মিলে সুজনের সমুদয় পরিচয় উদঘাটন করেন। পরে সুজনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অহিদুজ্জামান ও শিক্ষক আবু ছালেহ পটুয়াখালী থানার দ্বারস্থ হন। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে পটুয়াখালী সদর থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকিত হাসান, সদর থানার ওসি আখতার মোর্শ্বেদের উপস্থিতে মাইদুল ইসলাম সুজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মা বিলকিস বেগমের হাতে তুলে দেন। এ সময় মা ও ছেলের মিলন মেলায় এক হৃদয় বিদারত দৃশ্যের অবতারনা হয় এবং উপস্থি সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইসলামী আন্দোলনের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরআইএম অহিদুজ্জামান বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাতলা এলাকার প্রিয়জন কম্পিউটারে মাইদুলের সন্ধান পাই। মাইদুল বলেন, তার বাবার নাম মতিউর রহমান মুন্সি, মায়ের নাম বিলকিস, বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুরা গ্রামে। পরে উপজেলা কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু সালেহকে মুঠোফোনে সুজনকে খুজে পাওয়ার বিষয়টি জানাই। পরে তিনি সবকিছু জেনে শুনে সুজনকে শনাক্ত করেন। শুক্রবার দুপুরে মাইদুলকে নিয়ে তার বাড়িতে উপস্থিত হই। এরপর তার মা, নানি ও মামারা দেখে মাইদুলকে চিহিৃত করেন। এ সময় ওই বাড়িতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন, মাইদুল ইসলাম সুজনের সন্ধানের বিষয়টি পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান ও ওসি আখতার মোর্শ্বেদকে জানাই। পরে পুলিশের মাধ্যমে মাইদুল তার পরিবারের কাছে ফিরে যায়। বরগুনার আমতলী থানার হলুদিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও দক্ষিণ কাঁঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবু সালেহ বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে পটুয়াখালী ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আরআইএম অহিদুজ্জামান আমাকে মোবাইল ফোনে সুজনের খবর দেয়। পরে মাইদুলের সকল খোজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়ে তার পরিবারের কাছে সকল ঘটনা খুলে বলি এবং পটুয়াখালী থানা পুলিশ মাইনুলকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। কান্নাজনিত কন্ঠে মা বিলকিস বেগম বলেন, মোর স্বামী নেই। মুই পোলাডারে হারাইয়্যা মরার মতো বাইছ্যা আল্লাম। আল্লায় মোর পোলাডারে মোর কাছে ফিরাইয়্যা দেছে। মুই আল্লার ধারে কোটি শুকরিয়া জানাই। পটুয়াখালী জজ কোর্ট এলাকার প্রিয়জন কম্পিউটারের পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, ২০১২ সালে আমার বাবা সুজনকে ঢাকায় সদর ঘাটে কান্না করতে থাকে অনেক খুজেও তারপরিবারকে না পেয়ে। পরে বাবা বাড়ীতে নিয়ে আসে। ওই সময় থেকে মাইদুল আমার কাছে বড় হয়েছে। কিন্তু ওই সময় মাইদুল বাবা-মায়ের নাম ছাড়া আর কিছু বলতে পারেনি। গত ৮ বছর আমাদের পরিবারের একজন হিসেবে ছিল। এখন সে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটা আমার কাছে অনেক পাওয়া। মাইদুল ইসলাম সুজন বলেন, আট বছর পরিবার থেকে বিছিন্ন ছিলাম। এখন পরিবারকে ফিরে পেয়ে আমি আনন্দিত। তবে তিনি আরো বলেন, মকবুল দাদার জন্যই আজ আমি একটা কিছু করতে পেরেছি। তার পরিবার আমাকে ভালোবেসে মানুষ করেছে। তাদের ঋণ শোধ করার নয়। পটুয়াখালী থানার ওসি আখতার মোর্শ্বদ বলেন, ঢাকার সাধারণ ডায়েরীর সুত্র ধরে মাইনুলকে সনাক্ত করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।
|
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |