বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন বাগান, নেই শিক্ষার্থী
|
![]() মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের সাবেক গুলিয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশংসিত দৃষ্টিনন্দন এক ব্যতিক্রমধর্মী বাগান থাকলেও নেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের বাগানের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পরলেও যাদের উদ্দেশ্যে এই বাগান করা সেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ শিক্ষা বিভাগ ও এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাবেক গুলিয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে স্কুল শুরুর পর হতেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও পড়াশোনার মান ভাল হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এ সুনামের ফলে ১৯৯৩ সালে উপজেলায় প্রথম সরকারী বরাদ্দের পাকা ভবন পায়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই চলে স্কুলের কার্যক্রম। তবে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আঃ কুদ্দুসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হলে লেখাপড়ার কিছুটা বিঘ্নতা ঘটে। এরপর তিনি ২০১৫ সাল থেকে মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ হলে তিনি শর্তপূরণ না করায় আর প্রধান শিক্ষক হতে পারেন নি। তবে ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৮ সালে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মীনা রাণী মহন্ত যোগদান করে। এরপর হতেই প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বর্তমানে সহকারী শিক্ষক আঃ কুদ্দুস নিজের খেয়াল খুশি মত চলাফেরা শুরু করেন। প্রধান শিক্ষকের পদটি আবারো ফিরে পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য করোনার বন্ধের সময় বিদ্যালয়ের পার্শ্বে গড়ে তোলেছেন দৃষ্টিনন্দন বাগান। এই বাগানের প্রশংসা এলাকাবাসী করলেও যাদের উদ্দেশ্যে এই বাগান করা সেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও লেখাপড়ার মান নিয়ে অসন্তোষ তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার ও উত্তর পার্শ্বে দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে বিদ্যালয়ে নেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী। ৩য় শ্রেণিতে ২ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৭ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী ৩ শিক্ষক থাকলেও নেই প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বর্তমানে সহকারী শিক্ষক আঃ কুদ্দুস।
প্রধান শিক্ষিকা মীনা রাণী মহন্তের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০১৮ সালে চলতি দায়িত্বে যোগদান করার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ কুদ্দুস হাজিরা খাতা ছাড়া আর কোন অফিসিয়ালি কাগজ পত্র বুঝে দেন নি। স্কুলেও নিয়মিত আসেন না। আর আসলেও দু’একটি ক্লাস নিয়েই চলে যান। ফোন দিলেও ধরে না আর ধরলেও স্কুলে আসার বিষয়ে বললে তিনি বাইরে আছি বলে তুই তকারি সম্বোধনে গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির আশায় করোনার সময় দৃষ্টিনন্দন বাগানটি করেন। বাগান করা তো ভাল কাজ কিন্তু স্কুলের দায়িত্ব তো ভাল ভাবে পালন করতে হবে। এই বাগান মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোকজন তা দেখতে আসে। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকায় কটু কথা ও অবজ্ঞা শুনতে হয়। সম্প্রতি বাগান দেখতে এসে যুগ্ন সচিব স্যারও অসন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন। বিদ্যালয়ের পার্শ্বে শাহপাড়ায় প্রায় ২৫০ পরিবারের সাথে কুদ্দুস স্যারের ঝগড়া থাকায় তাদের কোন বাচ্চা স্কুলে আসে না।
সহকারী শিক্ষিকা সুধা রানী রায় ও হিরণ্য ময়ী রায় বলেন, কুদ্দুস স্যার স্কুলে মাঝে মধ্যে আসেন। এসে বেশিরভাগ সময় তিনি বাগানের কাজ করে। গত দু’এক বছরে ওনাকে ক্লাস নিয়মিত নিতে দেখে নি।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জীবন রায় ও ছাত্রী মিম মনি বলেন, কুদ্দুস স্যার আমাদের অঙ্ক ক্লাশ নেয়। তবে তিনি নিয়মিত না আসায় হেড মাস্টারনি আপা বেশির ভাগ দিন ক্লাস নেয়। স্যার যেদিন স্কুলে থাকে সেদিন ছাড়া আমাদের বাগানে প্রবেশ করতে দেয় না।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক আঃ কুদ্দুসের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালে স্কুলে গিয়ে সই দিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে একটা জরুরি কাজে এসেছি। স্কুলে আমার জন্য আলাদা কোন বসার ব্যবস্থা নেই তাই আমি ক্লাস নিয়েই চলে আসি। বাগানটি শিক্ষার্থীদের জন্যই করা হয়েছে, সেটা সব সময় খোলা থাকে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম এ মান্নান বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন, মা সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে। আর সহকারী শিক্ষক আঃ কুদ্দুসের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আমাদের কোন কিছু জানায় নি। জানালে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
|
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |