মঙ্গলবার ৬ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   মঙ্গলবার ৬ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

আগৈলঝাড়ায় ৫’শ ২৮ বছরের পুরোনো বিজয় গুপ্তর ঐতিহ্যবাহি গৈলা মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূজা ১৭ আগস্ট
প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২২, ৭:৪৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

আগৈলঝাড়ায় ৫’শ ২৮ বছরের পুরোনো বিজয় গুপ্তর ঐতিহ্যবাহি গৈলা মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূজা ১৭ আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক:- মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অমর কাব্য “মনসা মঙ্গল” রচয়িতা প্রখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মনসা মন্দিরে পুজা পূর্ববর্তি তিন দিন ব্যপী রয়ানী শুরু হবে ১১ আগস্ট। চলবে ১৩ আগস্ট গভীর রাত পর্যন্ত। রয়ানী গান পরিবেশন করবে বরিশালের ঐতিহাসিক রয়ানী দল শ্রী শ্রী মা মনসা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। রয়ানী শেষে ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে দেবী মসনার ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক পুজা।
বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, অমর কাব্য পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল কাব্যর রচয়িতা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে জন্ম নেয়া বিশ^খ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত “মনসাকুন্ড” নামে প্রতিষ্ঠিত ৫’শ ২৮বছর বছরের প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দিরে দেবী মনসার বাৎসরিক পূঁজা ১৭ আগস্ট বুধবার। প্রতি বছর মহাআড়ম্বড়ের মধ্য দিয়ে বাংলা শ্রাবন মাসের শেষ দিনে ‘বিষ হরি’ বা মনসা দেবীর পুজা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
পুজার আগে ওই মন্দিরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ছন্দ, পয়ার আর সুরের মূর্ছণায় রয়ানী গান উৎসব। রয়ানী গান মুলতঃ মনসা মঙ্গল কাব্য থেকে নেয়া ছন্দ আর সুরের অনণ্য পরিবেশনা। এই রয়ানী গানে চাঁদ সওদাগর, তার পুত্র লক্ষিন্দর আর পুত্রবধু সতী বেহুলার অপার সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমে সর্পে দংশণ করা মৃত স্বামী লক্ষিন্দরকে পুণরায় বাচিয়ে তোলার মাধ্যমে মর্তলোকে দেবী হিসেবে ‘মনসা’র পুজিত হওয়ার প্রয়াসের কাহিনী বর্ণনা। শিল্পীদের রং, ঢং, পয়ার, আর সুরের মূর্ছনার শৈল্পিক বর্ণনার অপরুপ নিদর্শণ।
“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”-এ বাক্যকে ধারণ করে বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দিরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বাৎসরিক পুজার দিন দেশ ও বিভিন্ন হাজার হাজার ভক্ত ও পূণ্যার্থীর মা মনসার চরণে তাদের পূষ্পার্ঘ্য নিবেদনের জন্য মন্দিরে সমবেত হয়ে আসছেন।
মনসা মঙ্গল কাব্য, ইতিহাস ও জনশ্রুতি মতে, আজ থেকে ৫শ ২৮বছর আগে মধ্য যুগে সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্ব আমলে ইংরেজী ১৪৯৪ সনে কবি বিজয় গুপ্ত সর্পের দেবী মনসা বা বিষ হরি (বিষ হরণকারী) দেবী কর্র্তৃক স্বপ্নে দেখে নিজ বাড়ির সু-বিশাল দীঘি থেকে পুজার একটি ঘট তুলে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে দেবী মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে দেবী মনসার স্বপ্ন আদেশে দিঘীর ঘাটের পাশ্ববর্তি একটি বকুল গাছের নীচে বসে “পদ্মপুরাণ” বা “মনসা মঙ্গল” কাব্য রচনা করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের তৎকালীন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ওই বছরই বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গঁল রচনার জন্য রাজ দরবারে “মহা কবি”র খেতাবে প্রতিষ্ঠিত হন।
জনশ্রুতি রয়েছে, দেবী পদ্মা বা মনসা বিজয় গুপ্তের কাব্য রচনায় সন্তুস্ট হয়ে আশির্বাদ হিসেবে বিজয় গুপ্তকে স্বপ্নে বলেছিলেন “তুই নাম চাস, না কাজ চাস?” উত্তরে বিজয় গুপ্ত বলেছিলেন “আমি নাম চাই”। যে কারনে তার নাম বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়লেও তিনি দেহত্যাগ করেছেন উত্তরাধিকার বিহীন। ঐতিহাসিকভাবে বিজয় গুপ্তর সঠিক জন্ম বা মৃত্যুর তারিখ জানা জায়নি। তবে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভবত ৭০ বছর বয়সে ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে কাশীধামে বিজয় গুপ্ত দেহত্যাগ করেন। সেই হিসেবে তার জন্ম ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ৪৪ বছর বয়সে তিনি মনসা মঙ্গল কাব্য রচনা করেন। মহাকবি বিজয় গুপ্তের পিতার নাম সনাতন গুপ্ত ও মাতার নাম রুক্সিনী দেবী।
বিজয় গুপ্তর আগেও একাধিক পন্ডিত ও কবিগন মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ময়মনসিংহ’র কানা হরি দত্ত। তবে তারা কেউ তাদের কাব্যে দিন, তারিখ ও সন লিপিবদ্ধ করেন নি। বিজয় গুপ্তই সর্বপ্রথম তাঁর রচিত মনসা মঙ্গল কাব্যে সর্ব প্রথম ইংরেজী তারিখ ও সনের লিপিবদ্ধ করেন।
অন্যান্যদের তুলনায় বিজয়গুপ্তর কাব্য নিরস হলেও নৃপতি তিলক’র (সুলতান হোসেন শাহ) গুণ-কীর্তন ও ইংরেজী তারিখ ও সনের লিপিবদ্ধ করায় বিজয় গুপ্তই হয়ে ওঠেন মনসা মঙ্গল কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম। আর এ কারণে রাজ দরবারে “মহা কবি” খেতাব পাওয়ার পর ভারতবর্ষসহ পৃথিবীরে বিভিন্ন দেশে মহা ধুমধামের সাথে মনসা দেবীর পুজার প্রচলন ঘটে। যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত বিদ্যমান রয়েছে।
গৈলা কবি বিজয় গুপ্ত’র স্মৃতি রক্ষা মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাসগুপ্ত জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা কালীন সময়ে পাকিস্তানী বর্বর সেনারা বিজয় গুপ্ত মন্দির থেকে মনসা দেবীর পাথরের বিগ্রহ চুরি করে নিয়ে যায়। স্বাদীনতা উত্তর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ঘট ও নির্মিত প্রতীমায় পুজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় দেশ বিদেশের ভক্তবৃন্দর আর্থিক অনুদানে ২০০৮ সালে প্রায় ১টন ওজনের পিতলের তৈরি মনসা দেবীর প্রতিমা পূণঃ স্থাপন করা হয়।
বর্তমানে মনসা মন্দিরটি ধর্মীয় উপাসনালয়ের পাশাপাশি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও সর্বত্র ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বরিশাল জেলা প্রশাসনের দর্শনীয় স্থানের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঐতিহাসিক বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরের নাম। বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রি, সচিব, বিদেশী কুটনৈতিকগন, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাগনসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা দর্শনে আসেন দেবী মনসার প্রতীমা ও ঐতিহাসিক মনসা মন্দির। দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থী, দর্শক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পর্যটনের উল্লে¬খযোগ্য স্থান হিসেবে রয়েছে এ মন্দিরের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।

 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

পুরোন সংবাদ খুজুন
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
Enjoy Network

সর্বাধিক পঠিত

প্রকাশক: সৈয়দ রিপন

সম্পাদক: রোমান চৌধুরী

মোবাইলঃ ০১৭১১৯৫৭২৬৩ / 09639298200

অফিস : জানুকি সিং রোড,কাউনিয়া,বরিশাল

ই-মেইলঃ barisalpress247@gmail.com

Design & Developed by
  চাপের মুখে বিমার অর্থ ছাড় না দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর   করোনার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ সাময়িক বন্ধ   বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বার্ষিক শীতকালীন মহড়া ‘উইনটেক্স’ সমাপ্ত   বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী   মালিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শান্তিরক্ষা কন্টিনজেন্ট প্রতিস্থাপন   শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু   ডিজিটাল সিস্টেমে ভাষা শেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী   শান্তিরক্ষা মালি গেলেন ১৪০ পুলিশ সদস্য   নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস, ২ দিন বন্ধ : শিক্ষামন্ত্রী   মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ   খানসামায় অনুমোদন ছাড়াই জৈব সার তৈরী ও বিক্রি ২০ হাজার টাকা জরিমানা   আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালায় না: প্রধানমন্ত্রী   ডিসিদের ২৫ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর   পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের অভিভাবক হবেন মা: হাইকোর্টের রায়   তিন দিনের সফরে যে আশ্বাস দিয়ে গেলেন বিশ্বব্যাংকের এমডি   স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের মানুষের কাছে অষ্টম আশ্চর্যের মত বিসিসি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ্   ভিডিও কনফারেন্সে পায়রা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী   আতংকে সমুদ্র পাড়ের মানুষ ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় প্রস্তুত কলাপাড়া প্রশাসন   বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট গভীর নিম্নচাপঃ ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি   বাংলাদেশে যেন খাদ্যাভাব দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে
error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন !!