আপিল চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে
|
![]()
নিউজ ডেস্কঃ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় (পিলখানা হত্যা মামলায়) হাইকোর্টের রায়ে যে সকল আসামির সাজা কমেছিল সেসব আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হয়েছিল। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এই আপিল আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আজ মোট চারজনের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়েছে। যারা হাইকোর্টে খালাস পেয়েছিলন এবং যাদের সাজা হাইকোর্ট কমিয়ে দিয়েছেন তাদের সকলের ক্ষেত্রেই আপিল দায়ের করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ৫৩ হাজার পৃষ্ঠার একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে আজ। এভাবে আরও ১০টি পিটিশন দায়ের করা হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতবেশি কাগজ ব্যবহার করে আগে কখনো আপিল করা হয়নি। তাই এটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আমাদের কিছু সময় লেগেছে। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু সংযুক্তিপত্র দেয়ার ক্ষেত্রে অব্যাহতি চেয়ে আমরা আদালতে আবেদন জানাবো। এরপর খুব দ্রুত আমরা আপিলের শুনানি শুরু করতে পারবো বলে আশা রাখছি। এই হত্যার ঘটনায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি নিয়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন হাইকোর্ট। যে রায়ে বিচারিক আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। গত ১৩ জানুয়ারি পিলখানা হত্যা মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওই দিন হাইকর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর পূর্ণাঙ্গ রায়টি সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে প্রকাশ করা হয়। দেশের ইতিহাসে এই মামলার আসামির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর রায়ের পৃষ্ঠার সংখ্যার দিক থেকেও এটি সবচেয়ে বড় রায়। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দেয়া রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এছাড়া যাবজ্জীবন দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও খালাস দেয়া হয় ৪৫ জনকে। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এ মামলায় আদালত এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সম্পূর্ণ রায় প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদরদফতরে ঘটেছিল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে। মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তাদের একজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন আসামি। সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন। নিম্ন আদালতের রায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনাকারী উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলম। বিডিআরের বাইরে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তারা হলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলী। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কারাগারে মারা যান নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক তখন বলেছিলেন, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। একটি বিদ্রোহ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে যে কারণে এ বিদ্রোহ হয়েছে, তা ছিল অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। সেনাবাহিনীর মনোবল নষ্ট করা, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়াই ছিল হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ। আদালত ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়ে বলেন, মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিক হলেন পিলখানার পাশের এলাকার বাসিন্দা নায়েক সুবেদার (অব.) কাঞ্চন আলীর ছেলে জাকির হোসেন। পিন্টু ও তোরাব আলীকে যাবজ্জীবনের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়; অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে অস্ত্র লুণ্ঠনের দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এতে করে তাদের ৪০ বছরের সাজা হয়। ২৫৬ জনের মধ্যে ২০৭ জনকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে তাদের আরেকটি অভিযোগে আরও তিন বছরের সাজা দেয়া হয়। এ নিয়ে মোট ১৩ বছর কারাভোগ করতে হবে তাদের। নিম্ন আদালতের রায়টি ছিল মোট চার হাজার পৃষ্ঠার। |